Friday, January 24, 2020

দ্বীপ খুব তড়িঘড়ি করেই অফিসে যাচ্ছিল, অনি খুব যত্ন করে ভোরে উঠে নাস্তা বানিয়েছে, এখনো তার চোখে ঘুম, গত রাতে বাবুটা ঘুমাতে দেয়নি, জ্বরে শরীরটা পুড়ে যাচ্ছে, সকালে অনেক কষ্টে ঘুম পাড়িয়েছে...

দ্বীপ খুব তড়িঘড়ি করেই অফিসে যাচ্ছিল, অনি খুব যত্ন করে ভোরে উঠে নাস্তা বানিয়েছে, এখনো তার চোখে ঘুম, গত রাতে বাবুটা ঘুমাতে দেয়নি, জ্বরে শরীরটা পুড়ে যাচ্ছে, সকালে অনেক কষ্টে ঘুম পাড়িয়েছে...


বয়সটা সবে ৫ মাস...
সংসারে টুকিটাকি কেনা চলছে এখনো, এক রুমের বাসাটা দ্বীপ অার অনি খুব যত্ন করে সাজাচ্ছে....
 সামনের মাসে একটা ড্রেসিং টেবিল কিনবে ভেবে রেখেছে দ্বীপ...

দেয়ালে ঝুলানো ছোট্ট অায়নাটা দেখে দেখে অনি চুল অাঁচড়ায়, সাজগুজ করে, এসব দেখে দ্বীপের সহ্য হয়না, সে চায় অনি বসে শাড়ির অাঁচলটা  হেয়ালীপনায় ফেলে খোঁপা খুলে অায়নায় তাকিয়ে সে চুল অাঁচড়াক, টিপটা দিতে যেন কষ্ট না হয়, বার বার যেন কষ্ট করে পায়ের পাতা তুলে টিপ দিতে এলোমেলো না হোক....

গত মাসে ফ্রিজ কেনার কথা, কিন্তু বাবুর অসুস্হতার কারণে টাকাটা দিয়ে বুনে রাখা ইচ্ছেগুলো পূরণ হয়নি, পাশের বাসার ফ্রিজটায় সেদিন মাংস রাখতে গিয়ে কত কথাই না শুনতে হলো, তাই দ্বীপ প্রতিদিন অফিস শেষে বাজার করে, কিন্তু প্রতিদিন বাজার করাতে অনির কষ্ট হয় সেটা সে খুব ভাল করেই বুঝে.....

দ্বীপের অফিস যেতে মাঝে মাঝে দেরী হয়, রাস্তায় প্রচুর জ্যাম, তার উপর লোকাল বাসে অফিস যেতে সময় নষ্ট হয়, কিছু করার নেই, বস ইদানিং ভাল চোখে দেখছেনা তাকে, দ্বীপ ভাবে হাতে ভাল কিছু টাকা থাকলে একটা বাইক নিবে, কিন্তু ঐ টা পূরণ করা যে তার জন্য দুঃসাধ্য তা সে জানে.....

দিন দিন মানসিক অস্তিরতায় সে ভেঙ্গে পড়ছে, সেটা অনিকে বুঝানোর সুযোগ নেই, সংসারের কাজ, বাচ্চা সামলানো, বাসায় একা থাকা, এসবে তো অনিও সারাক্ষণ প্রেসারে থাকে, ওকে বললে তো সে অাবার ওসব নিয়ে ভাববে....

দ্বীপ বুঝে অনিকে নিয়ে কোথাও তেমন যাওয়া হয়না, বাবু নেবার পর থেকেই অনি বাসা থেকে বের হয় না তেমন, মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে করে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে, পিচঢালা পথে খালি পায়ে রৌদ্রের তাপ অনুভব করতে, তার কাঁধে মাথা রেখে অনি হাতটা অালতো করে ধরুক......

দ্বীপের কলিগ রায়ান ছুটিতে, তার বাইকটা কিছুদিনের জন্য নেওয়া, অফিস যেতে বেশ সুবিধা হয়...

দ্বীপের তাড়াহুড়ো করার কারণ বস হুট করে সকালে মিটিং ডেকেছে, অনির হাতে বানানো নাস্তাগুলো মুখে নেবার সুযোগ পেল না সে, সিঁড়িতে গিয়ে টিফিন ক্যারিয়ারটা অনেককটা কষ্টে অনি হাতে ধরিয়ে দেয়, প্রতিদিন যাবার সময় বুকে জড়িয়ে ধরার স্বভাবটা দ্বীপের অভ্যাসই ছিলো, কিন্তু অাজ তা হয়নি, শেষ দেখায় শুধু হাতটা নাড়িয়ে দেয়.....

অনি তাকিয়ে থাকে দূর থেকে........

হেলমেটটা অফিসে ফেলে এসেছিলো, মনে নেই, চারপাশে প্রচুর ধুলো, অাজ রাস্তা অনেকটা ফাঁকা, সময় নেই হাতে, হাতের ঘড়িটা উল্টো করে পড়েছে, টাইম দেখছে না, বাইরে তখনও সূর্যটার লুকোচুরি করাটা শুরু হয়নি....

বিপরীত থেকে অাসা কাভার্ড ভ্যানটা হঠাৎ দ্বীপের সামনে এসে যায়, শেষ রক্ষা হলো না, কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়ে সে, ফিনকি দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকে, দ্বীপ ঠিক দু'বার মাথাটা তুলতে চেষ্টা করে হাতের শক্তি দিয়ে, সে পারেনা, ততক্ষণে লোকজন ভীড় করেছে চারপাশে, বাইকটার পিছনের চাকাটা এখনো ঘুরছে ......

অনির কোলে বাবু....
দাঁড়িয়ে অাছে হাসপাতালের বারান্দায়, কোন শব্দ নেই, চোখগুলো টলমল করছে, মুখটা কাঁপছে, কিছু যেন বলতে চেষ্টা তার, ইর্মাজেন্সী ওয়ার্ড থেকে রক্তাক্ত সাদা কাপড়ে কার লাশটা যেন বের করে অানছে ওয়ার্ড বয়....

মুখটা দেখা যাচ্ছেনা, দ্বীপের কলিগরা ডাক্তারের সাথে কথা বলছে, যে বসকে সে ভয় পায়, সেই বসও মুখ লুকিয়ে চোখ মুছে যাচ্ছে অনবরত....

অনির ঠিক সামনে স্ট্রেচারে লাশটা, বাম হাতটা বেরিয়ে গেছে কাপড় থেকে, হাতের ঘড়িটার কাঁচ ভেঙ্গে টাইমটা অস্পষ্ট, পায়ের জু'তো একটা নেই, মোজার ভিতর রক্তাক্ত হওয়া অাঙ্গুলগুলো নড়ছে মনে হয়, অনি মুখের কাপড়টা তুলে, কিছু করার সাহস পায় না সে, ভেবে পায় না কি করবে, দ্বীপের বাম হাতটা ধরে হাঁটু গেড়ে হঠাৎ বসে পড়ে.......

মায়ের কোল হীন শিশুটা কাঁদছে, এ যেন বাবা হারানোর কান্না...

 কেউ বুঝে, কেউ বুঝেনা.......

:)

লেখক- জোনায়েদ নাঈম

No comments:

Post a Comment

গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ১৭৭৩ জনের করোনা শনাক্ত

করোনাভাইরাস আপডেট(২১/০৫/২০২০) বাংলাদেশেঃ দেশে করোনা ভাইরাসে নতুন আক্রান্ততের সংখ্যা ১৭৭৩ জন গত ২৪ ঘন্টায় নতুন মৃত্যু হয়েছেন ২২ জন এই নিয়ে বা...